কমিক্সের রঙিন পাতায়, এনিমেশনের রূপালি পর্দায় এবং কমিক বুক গল্পের উপর নির্মিত মুভিতে সুপারহিরোদের দেখা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে অ্যাভেঞ্জার্স মুভিগুলোর কল্যানে সুপারহিরোরা আবার যেন পুনর্জন্ম লাভ করেছেন অডিয়েন্সের মাথার ভিতরে। তবে সুপারহিরো জনরার টিভি সিরিজ, মুভি, কার্টুন এবং কমিক্স মিলেনিয়ালরা আরো আগে উপভোগ করেছেন।
বাংলাদেশে এখন অনেক জনরাই এক্সপ্লোর করা হচ্ছে। থ্রিলার সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় জনরা এখন। অনেক উৎকৃষ্ট লেখক আবার থ্রিলারের মোড়কে সাইকোলজিক্যাল, ঐতিহাসিক, এবং সামাজিক উপন্যাস লিখছেন। তাদের লেখনী দারুন এবং লেখালেখির পিছনে করা গবেষণা সীমিত রিসোর্সের মধ্যে মোটামুটি ভালোই। ধারাবাহিকভাবে দারুন লিখে যাচ্ছেন কিশোর পাশা ইমন, সিদ্দিক আহমেদ, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, রবিন জামান খান, শরীফুল হাসান এবং আরো অনেকে।
সায়েন্স ফিকশনের জনরা নিয়েও কাজ চলছে। সুন্দর লেখালেখি হচ্ছে ফ্যান্টাসি এবং মিথলজি বেইজড ফিকশনের উপর।
হররের অনুবাদ এবং মৌলিক হররের উপর ভালো বই বের হচ্ছে। যদিও এই সকল জনরার লেখক এবং পাঠকদের যেতে হবে বহুদূর।
উল্লেখিত জনরা নিয়ে ইন্টাল্যাকচুয়াল এলিটিজমে ভুগা মানুষজন একধরণের উচ্চম্মন্যতায় ভুগে থাকেন। তারা কমিক্স, থ্রিলার, হরর, সায়েন্স ফিকশন এসব জনরাকে কোন সাহিত্যই মনে করেন না। অথচ তাদের এই মনে করাটা না পড়েই। বেশি না সম্ভব হলে তিনটি বই পড়ার আমন্ত্রণ রইলো তাদের প্রতি আমার দিক থেকে।
১) জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে
লেখক : কিশোর পাশা ইমন
২) এইখানে জাদুঘর পাতা আমাদের
লেখক : কিশোর পাশা ইমন
৩) ধনুর্ধর
লেখক : সিদ্দিক আহমেদ
এরপর তাদের সুচিন্তিত মতামত জানতে চাই।
কমিক্স মানেই কিন্তু তীব্র বেগে কোন স্পিডস্টারের ছুটে যাওয়া বা আকাশে উড়তে উড়তে চোখ থেকে লেসার বীম ছুড়ে মারা নয়। অথবা নয় নীল রঙের কোন দানবের ক্রোধের মাথায় সবকিছু ভেঙেচুরে দেয়া। কোন মাস্ক পড়া কিশোরের ওয়েব দিয়ে বিল্ডিঙ থেকে বিল্ডিঙে যাতায়াত করা নয়।
এসব তো গল্পের অনুসঙ্গ মাত্র। যারা কমিক্সের ইনক্রেডিবল ফ্যান তারা ভালোই জানেন আমি কি বলতে চাইছি।
কমিক বুকের ভিতরে একইসাথে থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, হরর, সাসপেন্স, ডার্ক মিস্ট্রি, সামাজিক উপন্যাস, ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখা গল্প অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারে। শুধু সুপারম্যানকে নিয়ে কমিক্স বই বের হয়নি। শার্লক হোমসকে নিয়েও গ্রাফিক নভেল আছে। জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ এর গ্রাফিক নভেল ফরম্যাট আছে। মার্গারেট এটউডের "দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল" এরও আছে। এরকম উদাহরণ অগুনতি দেয়া যায়। বাংলাদেশের লেখক নাবিল মুহতাসিমের গল্পের উপর করা গ্রাফিক নভেল "স্বাপদ সনে" এর গ্রাফিক নভেল তো রীতিমত সাড়া ফেলেছে।
কমিক্স মূলত সাহিত্যের এক ভিন্ন ফরম্যাটে উপস্থাপন ছাড়া কিছু নয়। গ্রাফিক নভেল এমন এক মিডিয়াম যেখানে রঙিন বা সাদাকালো প্যানেলে প্যানেলে অঙ্কন এবং লেখালেখি সমান্তরালে স্টোরিটেলিং করে যায়।
কমিক্স নিয়ে বাংলাদেশের রাইটার, আর্টিস্টরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের একজন লেখক রাগিব নিযাম জিসান সুপারহিরো জনরার উপর বই লিখছেন। কোন অঙ্কন ছাড়া বই। অর্থাৎ সুপারহিরো জনরার বই। নাম মনে করতে পারছিনা তবে শুনেছি "ডানায় আগুন" নামের একটি সুপারহিরো জনরার বই বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে।
ইংলিশে আমি নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার রাইটার ড্যান অ্যাবনেটের "এব্রিবডি ওয়ান্টস টু শেইভ দ্য ওয়ার্ল্ড" নামক সুপারহিরো জনরার দারুন এক বই পড়েছি। কোন অঙ্কন ছাড়া অ্যাভেঞ্জার্সদের উপর এই নভেলে কি সুন্দর করেই না লিখেছেন ড্যান।
বাংলাদেশে লেখকদের এক্সপ্লোর করার মতো একটি জনরা হতে পারে এই সুপারহিরো বেইজড গল্পগুলো। যত সহজ মনে হচ্ছে এসব গল্প লেখা আমার মতে তা মোটেও না। ভালো রিসার্চ এবং চমৎকার ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে গল্প ফুটিয়ে তুলতে হবে। কমিক্স, কার্টুন, এনিমেশন এবং মুভিতে যে রঙিন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন দৃশ্যগুলো দেখানো হয়েছে অনন্য সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে তা শুধুমাত্র লিখে পাঠকের মাথার ভিতরে মুভি চালিয়ে দিতে হবে।
চ্যালেঞ্জিং হলেও আমাদের দেশে এই জনরা লেখার মত যোগ্য লেখক বেশ কয়েকজন আছেন। তারা নিজস্ব দেশ, সমাজ এবং পারিপার্শ্বিকতার নিরিখে বা অন্য কোন প্যরাডাইমে সুপারহিরো জনরার গল্প বা উপন্যাস লিখতে পারেন। যদি তাদের ইচ্ছে থাকে অবশ্য।
সুপারহিরোরা কাউকে দোষারোপ না করে তার শহর, সমাজ, রাষ্ট্র, অথবা পৃথিবীর দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেন কোন অভিযোগ ছাড়াই। যাদের মধ্যে অনেকের আবার কোন সুপারপাওয়ারই নেই। তবে পৃথিবী রক্ষার গুরুদায়িত্বের ওজন তাদের কাধে চাপিয়ে দেয়া হলে তারা নিজেদের পাগুলো এই গরীব গ্রহের ভূমিতে গাছের মতো প্লান্ট করে ফেলেন।
আমাদের দেশে অবশ্যই সুপারহিরো জনরার উপর দুর্দান্ত সম্ভাবনাময় লেখক অনেক আছেন। সুপারহিরোদের মতো নিজ থেকে এই দায়িত্ব কাধে নিয়ে তারাও রাইটিং এর জগতে নিজেদের শক্ত ভিতের উপর দাড়িয়ে থাকতে পারেন।
0 Comments: